ঢাকা ০৬:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না লঞ্চ ব্যবসা,হুমকিতে অর্ধলাখ শ্রমিকের জীবন

  • স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৪:১১:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৩
  • ১৩৫ খবরটি দেখা হয়েছে

ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না লঞ্চ ব্যবসা। অব্যাহত লোকসানের কারণে বন্ধ হওয়ার উপক্রম ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে এক সময়ের জনপ্রিয় লঞ্চ সার্ভিস। লোকসানের ঘানি কমাতে সাময়িক সার্ভিস বন্ধ রেখেছে অনেক নেভিগেশন কোম্পানি। রোটেশন প্রথা চালু না হলে লঞ্চ ব্যবসা টিকে থাকতে পারবে না বলে আশঙ্কা নৌ পরিবহন সংশ্লিষ্টদের।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর লঞ্চ ব্যবসায় ধস নামায় ঝুঁকিতে পড়েছেন নৌ যাত্রী পরিবহন ও নৌযান ব্যবস্থাপনা খাতের অর্ধলাখ শ্রমিক-কর্মচারীর জীবন। লঞ্চ ব্যবসা টিকিয়ে রাখা এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের রুটি-রুজির নিশ্চয়তার জন্য নৌযাত্রী পরিবহন খাতে জ্বালানি তেলে ভর্তুকি প্রদান এবং ঢাকার গুলিস্তান থেকে হানিফ ফ্লাইওভার সদরঘাট পর্যন্ত লিঙ্ক করার সুপারিশ করেছেন লঞ্চ মালিক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু।
বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা এবং মাদারীপুর ও বাগেরহাটসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আট জেলার মানুষের রাজধানী ঢাকায় যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ছিল নৌপথ। স্বল্প ভাড়া এবং নিরাপদ যাত্রায় তাদের প্রথম পছন্দ ছিল নৌপথ।
কোনো জেলা থেকে বিকালে আবার কোনো জেলা থেকে রাতে ছেড়ে পরদিন সকালে গন্তব্যে পৌঁছত হাজার হাজার যাত্রীবোঝাই বিলাসবহুল লঞ্চগুলো। রাতের প্রকৃতি উপভোগ করতেও লঞ্চে চলাচল করতেন পর্যটকরা। এসব লঞ্চের অভিজাত শ্রেণির কেবিন পেতে রীতিমতো তদবির করতে হতো যাত্রীদের।
তবে গত বছরের ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর পাল্টে গেছে নৌপথের চিত্র।

বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে গন্তব্যে যেতে সময় লাগত ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা। পদ্মা সেতু উন্মুক্ত হওয়ার পর সড়কপথে ঢাকা থেকে বরিশাল পৌঁছানো যাচ্ছে মাত্র সাড়ে ৩ ঘণ্টা থেকে ৪ ঘণ্টায়। সড়ক পথে খরচ বেশি হলেও সময় অর্ধেক বেঁচে যাওয়ায় নৌপথ ছেড়ে সড়কপথে ঝুঁকে পড়েন যাত্রীরা। পদ্মা সেতু দেখা হয়ে গেলে যাত্রীরা আবার লঞ্চে ফিরবে বলে আশায় ছিলেন লঞ্চ মালিকরা। কিন্তু গত ১৪ মাসেও যাত্রী বাড়েনি, বরং কমছে।
এতে লঞ্চগুলো প্রায় যাত্রীশূন্য অবস্থায় চলাচল করছে গন্তব্যে।
বরিশাল-ঢাকা রুটের একটি লঞ্চের সুপারভাইজার নজরুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে লঞ্চে প্রতিদিন ১ থেকে দেড়-২ হাজার যাত্রী চলাচল করত। এখন ১৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০০ যাত্রী হচ্ছে। এতে লঞ্চের জ্বালানি খরচ এবং শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন দেওয়া যাচ্ছে না। অব্যাহত লোকসানের কারণে অনেক লঞ্চ কোম্পানি সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছে।

এমভি কীর্তনখোলা লঞ্চ কোম্পানির বরিশাল অফিস ম্যানেজার সরোয়ার হোসেন স্বপন বলেন, যাত্রী হয় না। জ্বালানি ব্যয় এবং শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন দিয়ে কেউ ভালো নেই। এ কারণে ঈদের পর সার্ভিস বন্ধ রেখেছেন তারা।

একই রুটের এমভি অ্যাডভেঞ্চার লঞ্চের বরিশাল অফিস ম্যানেজার হুমায়ুন কবির বলেন, চার-পাঁচটি লঞ্চ চলায় কোনো লঞ্চে প্রত্যাশিত যাত্রী হয় না। রোটেশনে দুই-তিনটি লঞ্চ চললেও কিছুটা রক্ষা হতো। একটি কোম্পানির খামখেয়ালির কারণে রোটেশন হচ্ছে না। লঞ্চ ব্যবসার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।

লঞ্চ মালিক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, লঞ্চ ব্যবসার কথা স্মরণ হলে কষ্ট লাগে। ঘুমাতে গেলে টেনশনে প্রেসার বেড়ে যায়। লঞ্চের শ্রমিক-কর্মচারী, ওয়েল্ডার, কার্পেন্টার, পেইন্টার, ইলেকট্রিশিয়ানসহ সংশ্লিষ্ট সবাই হা-হুতাশ করছেন।
তিনি বলেন, সরকার অনেক খাতে ভতুর্কি দেয়।
লঞ্চ ব্যবসা টিকিয়ে রাখাসহ শ্রমিক-কর্মচারীদের অনিশ্চয়তা কাটাতে লঞ্চের জ্বালানি তেলের দাম কমানো এবং গুলিস্তান থেকে হানিফ ফ্লাইওভার সদরঘাট পর্যন্ত লিঙ্ক করার দাবি জানান তিনি।

ট্যাগ :

দাকোপ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৮ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল

ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না লঞ্চ ব্যবসা,হুমকিতে অর্ধলাখ শ্রমিকের জীবন

আপডেট সময় : ০৪:১১:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৩

ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না লঞ্চ ব্যবসা। অব্যাহত লোকসানের কারণে বন্ধ হওয়ার উপক্রম ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে এক সময়ের জনপ্রিয় লঞ্চ সার্ভিস। লোকসানের ঘানি কমাতে সাময়িক সার্ভিস বন্ধ রেখেছে অনেক নেভিগেশন কোম্পানি। রোটেশন প্রথা চালু না হলে লঞ্চ ব্যবসা টিকে থাকতে পারবে না বলে আশঙ্কা নৌ পরিবহন সংশ্লিষ্টদের।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর লঞ্চ ব্যবসায় ধস নামায় ঝুঁকিতে পড়েছেন নৌ যাত্রী পরিবহন ও নৌযান ব্যবস্থাপনা খাতের অর্ধলাখ শ্রমিক-কর্মচারীর জীবন। লঞ্চ ব্যবসা টিকিয়ে রাখা এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের রুটি-রুজির নিশ্চয়তার জন্য নৌযাত্রী পরিবহন খাতে জ্বালানি তেলে ভর্তুকি প্রদান এবং ঢাকার গুলিস্তান থেকে হানিফ ফ্লাইওভার সদরঘাট পর্যন্ত লিঙ্ক করার সুপারিশ করেছেন লঞ্চ মালিক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু।
বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা এবং মাদারীপুর ও বাগেরহাটসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আট জেলার মানুষের রাজধানী ঢাকায় যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ছিল নৌপথ। স্বল্প ভাড়া এবং নিরাপদ যাত্রায় তাদের প্রথম পছন্দ ছিল নৌপথ।
কোনো জেলা থেকে বিকালে আবার কোনো জেলা থেকে রাতে ছেড়ে পরদিন সকালে গন্তব্যে পৌঁছত হাজার হাজার যাত্রীবোঝাই বিলাসবহুল লঞ্চগুলো। রাতের প্রকৃতি উপভোগ করতেও লঞ্চে চলাচল করতেন পর্যটকরা। এসব লঞ্চের অভিজাত শ্রেণির কেবিন পেতে রীতিমতো তদবির করতে হতো যাত্রীদের।
তবে গত বছরের ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর পাল্টে গেছে নৌপথের চিত্র।

বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে গন্তব্যে যেতে সময় লাগত ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা। পদ্মা সেতু উন্মুক্ত হওয়ার পর সড়কপথে ঢাকা থেকে বরিশাল পৌঁছানো যাচ্ছে মাত্র সাড়ে ৩ ঘণ্টা থেকে ৪ ঘণ্টায়। সড়ক পথে খরচ বেশি হলেও সময় অর্ধেক বেঁচে যাওয়ায় নৌপথ ছেড়ে সড়কপথে ঝুঁকে পড়েন যাত্রীরা। পদ্মা সেতু দেখা হয়ে গেলে যাত্রীরা আবার লঞ্চে ফিরবে বলে আশায় ছিলেন লঞ্চ মালিকরা। কিন্তু গত ১৪ মাসেও যাত্রী বাড়েনি, বরং কমছে।
এতে লঞ্চগুলো প্রায় যাত্রীশূন্য অবস্থায় চলাচল করছে গন্তব্যে।
বরিশাল-ঢাকা রুটের একটি লঞ্চের সুপারভাইজার নজরুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে লঞ্চে প্রতিদিন ১ থেকে দেড়-২ হাজার যাত্রী চলাচল করত। এখন ১৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০০ যাত্রী হচ্ছে। এতে লঞ্চের জ্বালানি খরচ এবং শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন দেওয়া যাচ্ছে না। অব্যাহত লোকসানের কারণে অনেক লঞ্চ কোম্পানি সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছে।

এমভি কীর্তনখোলা লঞ্চ কোম্পানির বরিশাল অফিস ম্যানেজার সরোয়ার হোসেন স্বপন বলেন, যাত্রী হয় না। জ্বালানি ব্যয় এবং শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন দিয়ে কেউ ভালো নেই। এ কারণে ঈদের পর সার্ভিস বন্ধ রেখেছেন তারা।

একই রুটের এমভি অ্যাডভেঞ্চার লঞ্চের বরিশাল অফিস ম্যানেজার হুমায়ুন কবির বলেন, চার-পাঁচটি লঞ্চ চলায় কোনো লঞ্চে প্রত্যাশিত যাত্রী হয় না। রোটেশনে দুই-তিনটি লঞ্চ চললেও কিছুটা রক্ষা হতো। একটি কোম্পানির খামখেয়ালির কারণে রোটেশন হচ্ছে না। লঞ্চ ব্যবসার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।

লঞ্চ মালিক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, লঞ্চ ব্যবসার কথা স্মরণ হলে কষ্ট লাগে। ঘুমাতে গেলে টেনশনে প্রেসার বেড়ে যায়। লঞ্চের শ্রমিক-কর্মচারী, ওয়েল্ডার, কার্পেন্টার, পেইন্টার, ইলেকট্রিশিয়ানসহ সংশ্লিষ্ট সবাই হা-হুতাশ করছেন।
তিনি বলেন, সরকার অনেক খাতে ভতুর্কি দেয়।
লঞ্চ ব্যবসা টিকিয়ে রাখাসহ শ্রমিক-কর্মচারীদের অনিশ্চয়তা কাটাতে লঞ্চের জ্বালানি তেলের দাম কমানো এবং গুলিস্তান থেকে হানিফ ফ্লাইওভার সদরঘাট পর্যন্ত লিঙ্ক করার দাবি জানান তিনি।