ঢাকা ০৩:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোগীদের পরম আশ্রয়স্থল ! স্বল্প মূল্যে ডায়ালাইসিস ও এনআইসিইউ সেবা

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ০৪:৫৬:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অগাস্ট ২০২৩
  • ৭৯ খবরটি দেখা হয়েছে

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল। পূর্বে নাম ছিল মিটফোর্ড হাসপাতাল। এটি পুরান ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে মিটফোর্ড রোড, বাবুবাজারে অবস্থিত।
হাসপাতাল তৈরির প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৮২০ সালে। ঢাকার তৎকালীন কালেক্টর রবার্ট মিটফোর্ড এই উদ্যোগ নেন। ১৮৩৬ সালে মারা যাওয়ার আগে নিজের সম্পত্তি মিটফোর্ড হাসপাতালের জন্য দান করে যান তিনি। পরে লর্ড ডালহৌসি এই সম্পত্তির উপর হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। অনেকে তখন এই হাসপাতালের জন্য অর্থ সহায়তা প্রদান করেন।
১৮৫৮ সালের ১ মে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে যাত্রা শুরু হয় ভারতীয় উপমহাদেশে স্বাস্থ্যসেবার প্রাচীন এই প্রতিষ্ঠানটির।
একটি মহিলা ও দুইটি পুরুষ ওয়ার্ড নিয়ে শুরু হয় ৯২ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতালের কার্যক্রম। পরবর্তীতে রোগীদের চাহিদার আলোকে বাড়তে থাকে স্বাস্থ্য সেবার পরিধি।
সেবার মান বাড়লেও অপ্রতুল শয্যা সংখ্যা ও অপর্যাপ্ত জনবলের পাশাপাশি এখানে রয়েছে নানা সীমাবদ্ধতা। তবে দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা প্রতিষ্ঠানটির চিকিৎসক-নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরলস প্রচেষ্টার কল্যাণে কাঙিক্ষত সেবা পাচ্ছেন রোগীরা।
আর এভাবে সময়ের ব্যবধানে সাধারণ মানুষের পরম আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত লাভ করে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল।
মিটফোর্ড হাসপাতালে ইমার্জেন্সি, বহির্বিভাগ, অন্তর্বিভাগ, সিসিইউ, আইসিইউ, এনআইসিইউ, ক্যাথল্যাব, ওয়ার্ড, কেবিন ও অপারেশন থিয়েটার ইত্যাদি বিভাগসমূহে সুপ্রশিক্ষিত চিকিৎসকদের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়।

বহির্বিভাগে সেবা

দুই নম্বর ভবনের নিচতলায় রয়েছে হাসপাতালের বহির্বিভাগ। এখানে গ্যাস্ট্রোএন্টারলজি, নেফ্রোলজি, নিউরোলজি, ইউরোলজি, কার্ডিওলজি, হেপাটলজি, অর্থোপেডিক্স, রেসপেরেটরি মেডিসিন ও ফিজিক্যাল মেডিসিনের সেবা দেওয়া হয়।
এ ছাড়াও বহির্বিভাগে গাইনি বিষয়ক বিভিন্ন রোগ, যেমন: ইনফার্টিলিটি ও ইউরোগাইনি রোগীদের সেবা দেওয়া হয়। চলে প্লাস্টিক সার্জারি, কলোরেক্টাল ও সার্জিক্যাল অনকোলজি রোগীদের সেবা।
সেই সঙ্গে নিউরো ডেভেলপমেন্টাল সমস্যা এবং পিছিয়েপড়া শিশুদের চিকিৎসা সেবার জন্য এখানে রয়েছে শিশু বিকাশ কেন্দ্র, যেখানে ১২ বছর পর্যন্ত শিশুদের নানা অপূর্ণতার চিকিৎসা দেওয়া হয়।
প্রতিদিন প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার রোগী গ্রহণ করেন এ চিকিৎসা সেবা।
শুক্রবার ও সরকারি ছুটির ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দশ টাকায় অনলাইনে টিকিট দেওয়া হয়। চিকিৎসা দেওয়া হয় দুপুর ২টা পর্যন্ত। টিকিট সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসকের রুমের সামনে লাইনে দাঁড়াতে হয়।

বহির্বিভাগে বিশেষায়িত সেবা নেবেন যেভাবে

বহির্বিভাগে মেডিকেল অফিসারগণ নিয়মিত নিরলসভাবে চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন। এর বাইরেও এ বিভাগে রয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানোর ব্যবস্থা। বিশেষজ্ঞ সেবা পেতে রোগীকে প্রথমে ১০ টাকার টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। টিকিটে উল্লিখিত রুম নম্বর অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসক দেখানো যায়।

জরুরি সেবা

এক নম্বর ভবনের নিচতলায় রয়েছে জরুরি বিভাগের কার্যক্রম। ২৪ ঘণ্টাই এখানে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া এ ভবনের নিচতলায় প্রদান করা হয় বহির্বিভাগের সেবাও।

অভ্যন্তরীণ সেবা

ভর্তির পর রোগীকে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। এর পরই নার্স স্টেশনের তত্ত্বাবধানে রোগীর নামে একটি ফাইল তৈরি হয়ে যায়। ভর্তি রোগীদের দেওয়া হয় সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা। রোগীদের সেবায় নিয়োজিত নার্স ও চিকিৎসকরা আন্তরিকভাবে নিয়মিত সেবা প্রদান করছেন।

ভর্তির প্রক্রিয়া

প্রথমে ১০ টাকার টিকিট সংগ্রহ করে রোগী সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসক দেখাবেন। পরে রোগীর উপযোগিতা সাপেক্ষে আরপি বা আরএস’র রেফারেন্সের ভিত্তিতে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। ভর্তির জন্য আলাদা করে ১৫ টাকা ফি দিতে হয়। এক্ষেত্রে জরুরি রোগীদেরকে ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার দেখানোর পর দ্রুততম সময়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগে ভর্তি করানো হয়।
এখানে একজন রোগীর সঙ্গে একজন আত্মীয় থাকার সুযোগ রয়েছে। ৫টা থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত ভর্তি রোগীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করা যায়। তবে শীতকালে এ সময় এক ঘণ্টা এগিয়ে আসে।

কেবিন ও বেড খরচ

হাসপাতালে দুই ধরনের বেড রয়েছে। এগুলো হলো, পেয়িং ও ফ্রি বেড। ৬০ শতাংশ ফ্রি বেড। ৪০ শতাংশ পেয়িং বেড।
অস্বচ্চল রোগীদের জন্য রয়েছে ফ্রি বেড। তাদের ওষুধসহ যাবতীয় খরচ হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয়। এ ছাড়া স্বচ্চল রোগীদের জন্য রয়েছে পেয়িং বেড। এসব বেডের দৈনিক ভাড়া ২৭৫ টাকা। পেয়িং বেড পেতে আরপি/আরএসের কাছে আবেদন করতে হয়। খালি থাকা সাপেক্ষে কোনো তদবির ছাড়াই রোগীদের বেড মেলে। কেবিন ভাড়া ১ হাজার ১২৫ টাকা। হাসপাতালে থাকা ১৬টি কেবিনের সবগুলোই এসি।

অ্যাম্বুলেন্স সেবা

হাসপাতালের ৪টি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে, যার মধ্যে একটি মাইক্রো, একটি পিকআপ ও দুটি জিপ গাড়ি। অ্যাম্বুলেন্স সেবা পেতে এক নম্বর ভবনের নিচতলায় পরিবহন শাখায় যোগাযোগ করতে হয়। রাজধানীর মধ্যে ভাড়া নির্ধারণ করা আছে ৩৫০টাকা। তবে ঢাকার বাইরে রোগী পরিবহনের জন্য হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের ব্যবস্থা নেই। অভ্যন্তরে রোগীদের একস্থান থেকে অন্যস্থানে নেওয়ার জন্য রয়েছে ট্রলি ও হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা।

ভবন পরিচিতি

সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে নতুন পুরাতন মিলিয়ে পাঁচটি ভবন রয়েছে। এগুলো এক নম্বর, দুই নম্বর, তিন নম্বর, মানসিক ওয়ার্ড ও ব্যাংক ভবন নামে পরিচিত। আর হাসপাতালে প্রবেশের জন্যও রয়েছে ৪টি পথ।

এক নম্বর ভবন

১১তলা বিশিষ্ট ১ নম্বর ভবনে ৩টি সিঁড়ির পাশাপাশি রয়েছে লিফট সুবিধা। নিচতলায় রয়েছে জরুরি বিভাগ, এমআরআই, সিটিস্ক্যান, ব্রেস্ট চিকিৎসায় এক্স-রে অব ম্যামোপ্রাফি মেশিন ও পরিবহন শাখা। পাশেই রয়েছে পথ্য বিভাগ। নিচতলায় ভবনের বাইরে উত্তর-পশ্চিম কোণে রয়েছে আগত রোগীর স্বজনদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা, যা নামমাত্র মূল্যে সংগ্রহ করা যায়।
ভবনটির দ্বিতীয়তলায় রয়েছে এক্সরের জন্য তিনটি রুম। এখানে অত্যাধুনিক ৫টি মেশিন রয়েছে, যা অভিজ্ঞ টেকনোলজিস্ট দ্বারা পরিচালিত হয়। এ ছাড়া রয়েছে দাঁতের পরীক্ষার জন্য ওপিজি এক্স-রে মেশিন ও হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগ। দ্বিতীয়তলায় রোগীদের উঠা-নামায় লিফটের পাশাপাশি রয়েছে ফ্ল্যাট সিঁড়ির ব্যবস্থা।
এ ভবনের দ্বিতীয়তলায় ফ্ল্যাট সিঁড়ির সামনে রয়েছে ক্যান্টিনের ব্যবস্থা, যেখানে সাশ্রয়ে চিকিৎসক-মেডিকেল শিক্ষার্থীসহ রোগীর স্বজনদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবার সরবরাহ করা হয়। ক্যান্টিন খোলা থাকে সকাল ৭টা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত।
তৃতীয়তলায় রয়েছে মহিলা ও শিশু সার্জারি বিভাগ। এ ছাড়াও আছে চারটি অপারেশন থিয়েটার, ১০ শয্যার আইসিইউ ও বার্ন ইউনিট।
সপ্তমতলায় গুরুতর অসুস্থ নবজাতকদের চিকিৎসায় রয়েছে গর্ব করার মতো ২৭ শয্যা বিশিষ্ট সমৃদ্ধ নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (এনআইসিইউ)। এতে রয়েছে অত্যাধুনিক এক্স-রে মেশিন। চিকিৎসাধীন শিশুদের তাপমাত্রা সঠিক রাখতে এখানে আছে অত্যাধুনিক ১৮টি ওয়ার্মার। লাইফ সাপোর্টের জন্য রয়েছে ছয়টি ভ্যান্টিলেটর। ১৫টি ফটোথেরাপি মেশিন, আল্ট্রাসনোগ্রাফি এবং ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিন।
এই ভবনের পেছনে রয়েছে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ছাত্রী হোস্টেল ও মহিলা ইন্টার্নি হোস্টেল। রয়েছে হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন মেশিন, যেখান থেকে পুরো হাসপাতালের অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। আছে শায়েস্তা খানের আমলের তিনশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী একটি প্রাচীন মসজিদ।
হাসপাতালের ব্যাংক ভবন সংলগ্ন দুই নম্বর প্রবেশ পথের পাশে রয়েছে একটি মসজিদ। এর সঙ্গে লাগোয়া পুরাতন ভবনে রয়েছে ট্রান্সফিউশন মেডিসিন, গ্যাস্ট্রোএন্টারলজি, ডায়াবেটিস ও লিভার বিভাগ। এখানেই রয়েছে হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক। এই ভবনের সামনে দৃষ্টিনন্দন ফুলবাগানের পূর্ব-উত্তর কোণে রয়েছে আরেকটি অক্সিজেন মেশিন, পুরো হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য নির্মিত কেন্দ্রটি চালুর অপেক্ষায় রয়েছে।

দুই নম্বর ভবন

দুই নম্বর ভবনের নিচতলায় পরিচালিত হয় সার্জারি, গাইনি ও পরিবার পরিকল্পনার বহির্বিভাগের কার্যক্রম।
এ ভবনের দ্বিতীয়তলায় থাকা ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি বিভাগে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টাই সেবা দেওয়া হয়। এই তলায় রয়েছে চক্ষু, নাক-কান-গলা, চর্ম ও যৌন এবং শিশু বহির্ভাগের কার্যক্রম। এ ছাড়াও রয়েছে শিশু বিকাশ কেন্দ্র ও ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার। চোখের ছোট-খাটো অপারেশনগুলোও পরিচালিত হয় ভবনটির এখানে।
তৃতীয়তলায় রয়েছে কার্ডিওলজি বিভাগ, দুটি ক্যাথল্যাব, যেখানে হার্টের রোগীদের এনজিওগ্রাম করা হয়। রোগীদের চাহিদার আলোকে সপ্তাহে ২/৩ দিন এ কার্যক্রম চলে। এখানে হাসপাতালের সিসিওতে ১৩টি ও পিসিসিওতে ২২টি শয্যা রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে ইসিজি, ইকো ও ইটিটি রুম। ৩টি ইকো ও দুটি ইটিটি মেশিন রয়েছে।
পঞ্চমতলায় রয়েছে নেফ্রলজি বিভাগ। এখানে রয়েছে স্বল্পমূল্যে রোগীদের ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা। বিভিন্ন ক্যাটাগরির ২৭টি ডায়ালাইসিস মেশিন রয়েছে এ হাসপাতালে। সলিমুল্লায় একই সময়ে বিশ জন রোগীকে ডায়ালাইসিস দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। ছয় মাসের প্যাকেজে প্রতি রোগীর কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ২২ হাজার টাকা। এ প্যাকেজের আওতায় একজন রোগী ৪৮ বার ডায়ালাইসিসের সুযোগ পান। খরচ বিবেচনায়, যা বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় একেবারেই কম।
হাসপাতালের এ ভবনের ষষ্ঠ ও সপ্তমতলায় রয়েছে মেডিসিন বিভাগ। অষ্টমতলায় ভর্তি আছেন নিউরোলজি, হেমাটলজি, হেপাটলজি, এন্ডোক্রাইন ও রেসপেরেটরি মেডিসিন বিভাগের রোগীরা।

তিন নম্বর ভবন

তিন নম্বর ভবনের নিচতলায় পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ড এবং দ্বিতীয়তলায় রয়েছে মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড। তিনতলায় রয়েছে পেয়িং বেড। ভবনটির পেছনে রয়েছে নার্সিং ইনস্টিটিউট।
হাসপাতালের তিন নম্বর গেট দিয়ে ঢুকলেই মিলবে পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্র। সেখানে সলিমুল্লায় চিকিৎসাধীন রোগীদের জন্য রয়েছে উন্নত মেশিনের মাধ্যমে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ। একটু সামনে রয়েছে মানসিক রোগীদের নির্ধারিত ওয়ার্ড। এখানে গুরুতর রোগীদেরকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা

মিটফোর্ড হাসপাতালে সরকার নির্ধারিত মূল্যেই প্রয়োজনীয় সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার জন্য দুই নম্বর ভবনের সামনে নির্ধারিত কাউন্টারে টাকা জমা দিতে হয়।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা হলো: রেনাল এনজিওগ্রাম, সিটি স্ক্যান, এমআরআই ইনডিভিজুয়াল, এমআরআই কনট্রাস্ট রেটস, এক্স-রে, মেমোগ্রাফি ৮০০, টিসি, ডিসি, ইএসআর, হিমোগ্লোবিন ১৫০, প্লেটিলেট, বোন ম্যারো, ব্লাড সুগার, সিরাম বিলিরুবিন, সিরাম ক্রিয়েটিনিন, লিভার ফাংশন টেস্ট, কিডনি বায়োপসি, অ্যান্টিবডি নির্ণয়, এইচআইভি, এন্টি থাইরয়েড পারঅক্সিডেস ও ডেঙ্গু।
হাসপাতালে কিছু দালালের উৎপাত থাকলেও কর্তৃপক্ষের সক্রিয় ভূমিকায় তারা সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পায় না। পরিচালকের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের কল্যাণে হাসপাতালের সেবা ও সামগ্রিক পরিবেশ অনেক সুন্দর অবস্থায় রয়েছে।

অপারেশন

কার্ডিয়াক সার্জারি ও ট্রান্সপ্ল্যান্ট ছাড়া এ হাসপাতালে ছোট-বড় সব ধরনের অপারেশন হয়। নামমাত্র মূল্যে রয়েছে সিজারের সুব্যবস্থা। ফি বেডে চিকিৎসাধীন রোগীদের অপারেশনের জন্য কোনো টাকা দিতে হয় না। পেয়িং বেডের রোগীদের মাইনর অপারেশনের জন্য ৫০০ টাকা, মেজর অপারেশনের জন্য ১০০০ টাকা এবং কেবিনে ভর্তি রোগীদের মাইনর ও মেজর অপারেশনের জন্য ২০০০ টাকা দিতে হয়।

সকল বিল অনলাইনে

হাসপাতালের সব পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ যাবতীয় বিল অনলাইনে প্রদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যার ফলে লেনদেনে বন্ধ হয়েছে আর্থিক অনিয়মের সকল দুয়ার।
অনলাইনে বিল পরিশোধ পদ্ধতি চালু হওয়ার ফলে সরকারের রাজস্ব আয় বেড়ে গেছে প্রায় চারগুণ। হাসপাতালের তথ্য মতে, পূর্বে বছরে যেখানে আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা আয় হতো, সেখানে বর্তমানে প্রায় ১০ থেকে ১১ কোটি টাকা আয় হয়। তাদের দাবি, রাজস্ব আদায়ে অভাবনীয় সাফল্যের এ পদ্ধতি অনুসরণের চেষ্টা চালাচ্ছে, ঢাকা মেডিকেল ও চট্টগ্রাম মেডিকেলসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর থেকে মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। দক্ষতার সঙ্গে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে হাসপাতালটি হয়ে উঠেছে রোগীদের আস্থার প্রতীক। তবে জনবলসহ অন্যান্য সংকট কাটিয়ে উঠতে পারলে চিকিৎসা সেবায় আসবে অভাবনীয় গতি।

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

রোগীদের পরম আশ্রয়স্থল ! স্বল্প মূল্যে ডায়ালাইসিস ও এনআইসিইউ সেবা

আপডেট সময় : ০৪:৫৬:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অগাস্ট ২০২৩

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল। পূর্বে নাম ছিল মিটফোর্ড হাসপাতাল। এটি পুরান ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে মিটফোর্ড রোড, বাবুবাজারে অবস্থিত।
হাসপাতাল তৈরির প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৮২০ সালে। ঢাকার তৎকালীন কালেক্টর রবার্ট মিটফোর্ড এই উদ্যোগ নেন। ১৮৩৬ সালে মারা যাওয়ার আগে নিজের সম্পত্তি মিটফোর্ড হাসপাতালের জন্য দান করে যান তিনি। পরে লর্ড ডালহৌসি এই সম্পত্তির উপর হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। অনেকে তখন এই হাসপাতালের জন্য অর্থ সহায়তা প্রদান করেন।
১৮৫৮ সালের ১ মে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে যাত্রা শুরু হয় ভারতীয় উপমহাদেশে স্বাস্থ্যসেবার প্রাচীন এই প্রতিষ্ঠানটির।
একটি মহিলা ও দুইটি পুরুষ ওয়ার্ড নিয়ে শুরু হয় ৯২ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতালের কার্যক্রম। পরবর্তীতে রোগীদের চাহিদার আলোকে বাড়তে থাকে স্বাস্থ্য সেবার পরিধি।
সেবার মান বাড়লেও অপ্রতুল শয্যা সংখ্যা ও অপর্যাপ্ত জনবলের পাশাপাশি এখানে রয়েছে নানা সীমাবদ্ধতা। তবে দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা প্রতিষ্ঠানটির চিকিৎসক-নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরলস প্রচেষ্টার কল্যাণে কাঙিক্ষত সেবা পাচ্ছেন রোগীরা।
আর এভাবে সময়ের ব্যবধানে সাধারণ মানুষের পরম আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত লাভ করে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল।
মিটফোর্ড হাসপাতালে ইমার্জেন্সি, বহির্বিভাগ, অন্তর্বিভাগ, সিসিইউ, আইসিইউ, এনআইসিইউ, ক্যাথল্যাব, ওয়ার্ড, কেবিন ও অপারেশন থিয়েটার ইত্যাদি বিভাগসমূহে সুপ্রশিক্ষিত চিকিৎসকদের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়।

বহির্বিভাগে সেবা

দুই নম্বর ভবনের নিচতলায় রয়েছে হাসপাতালের বহির্বিভাগ। এখানে গ্যাস্ট্রোএন্টারলজি, নেফ্রোলজি, নিউরোলজি, ইউরোলজি, কার্ডিওলজি, হেপাটলজি, অর্থোপেডিক্স, রেসপেরেটরি মেডিসিন ও ফিজিক্যাল মেডিসিনের সেবা দেওয়া হয়।
এ ছাড়াও বহির্বিভাগে গাইনি বিষয়ক বিভিন্ন রোগ, যেমন: ইনফার্টিলিটি ও ইউরোগাইনি রোগীদের সেবা দেওয়া হয়। চলে প্লাস্টিক সার্জারি, কলোরেক্টাল ও সার্জিক্যাল অনকোলজি রোগীদের সেবা।
সেই সঙ্গে নিউরো ডেভেলপমেন্টাল সমস্যা এবং পিছিয়েপড়া শিশুদের চিকিৎসা সেবার জন্য এখানে রয়েছে শিশু বিকাশ কেন্দ্র, যেখানে ১২ বছর পর্যন্ত শিশুদের নানা অপূর্ণতার চিকিৎসা দেওয়া হয়।
প্রতিদিন প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার রোগী গ্রহণ করেন এ চিকিৎসা সেবা।
শুক্রবার ও সরকারি ছুটির ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দশ টাকায় অনলাইনে টিকিট দেওয়া হয়। চিকিৎসা দেওয়া হয় দুপুর ২টা পর্যন্ত। টিকিট সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসকের রুমের সামনে লাইনে দাঁড়াতে হয়।

বহির্বিভাগে বিশেষায়িত সেবা নেবেন যেভাবে

বহির্বিভাগে মেডিকেল অফিসারগণ নিয়মিত নিরলসভাবে চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন। এর বাইরেও এ বিভাগে রয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানোর ব্যবস্থা। বিশেষজ্ঞ সেবা পেতে রোগীকে প্রথমে ১০ টাকার টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। টিকিটে উল্লিখিত রুম নম্বর অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসক দেখানো যায়।

জরুরি সেবা

এক নম্বর ভবনের নিচতলায় রয়েছে জরুরি বিভাগের কার্যক্রম। ২৪ ঘণ্টাই এখানে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া এ ভবনের নিচতলায় প্রদান করা হয় বহির্বিভাগের সেবাও।

অভ্যন্তরীণ সেবা

ভর্তির পর রোগীকে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। এর পরই নার্স স্টেশনের তত্ত্বাবধানে রোগীর নামে একটি ফাইল তৈরি হয়ে যায়। ভর্তি রোগীদের দেওয়া হয় সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা। রোগীদের সেবায় নিয়োজিত নার্স ও চিকিৎসকরা আন্তরিকভাবে নিয়মিত সেবা প্রদান করছেন।

ভর্তির প্রক্রিয়া

প্রথমে ১০ টাকার টিকিট সংগ্রহ করে রোগী সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসক দেখাবেন। পরে রোগীর উপযোগিতা সাপেক্ষে আরপি বা আরএস’র রেফারেন্সের ভিত্তিতে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। ভর্তির জন্য আলাদা করে ১৫ টাকা ফি দিতে হয়। এক্ষেত্রে জরুরি রোগীদেরকে ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার দেখানোর পর দ্রুততম সময়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগে ভর্তি করানো হয়।
এখানে একজন রোগীর সঙ্গে একজন আত্মীয় থাকার সুযোগ রয়েছে। ৫টা থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত ভর্তি রোগীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করা যায়। তবে শীতকালে এ সময় এক ঘণ্টা এগিয়ে আসে।

কেবিন ও বেড খরচ

হাসপাতালে দুই ধরনের বেড রয়েছে। এগুলো হলো, পেয়িং ও ফ্রি বেড। ৬০ শতাংশ ফ্রি বেড। ৪০ শতাংশ পেয়িং বেড।
অস্বচ্চল রোগীদের জন্য রয়েছে ফ্রি বেড। তাদের ওষুধসহ যাবতীয় খরচ হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয়। এ ছাড়া স্বচ্চল রোগীদের জন্য রয়েছে পেয়িং বেড। এসব বেডের দৈনিক ভাড়া ২৭৫ টাকা। পেয়িং বেড পেতে আরপি/আরএসের কাছে আবেদন করতে হয়। খালি থাকা সাপেক্ষে কোনো তদবির ছাড়াই রোগীদের বেড মেলে। কেবিন ভাড়া ১ হাজার ১২৫ টাকা। হাসপাতালে থাকা ১৬টি কেবিনের সবগুলোই এসি।

অ্যাম্বুলেন্স সেবা

হাসপাতালের ৪টি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে, যার মধ্যে একটি মাইক্রো, একটি পিকআপ ও দুটি জিপ গাড়ি। অ্যাম্বুলেন্স সেবা পেতে এক নম্বর ভবনের নিচতলায় পরিবহন শাখায় যোগাযোগ করতে হয়। রাজধানীর মধ্যে ভাড়া নির্ধারণ করা আছে ৩৫০টাকা। তবে ঢাকার বাইরে রোগী পরিবহনের জন্য হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের ব্যবস্থা নেই। অভ্যন্তরে রোগীদের একস্থান থেকে অন্যস্থানে নেওয়ার জন্য রয়েছে ট্রলি ও হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা।

ভবন পরিচিতি

সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে নতুন পুরাতন মিলিয়ে পাঁচটি ভবন রয়েছে। এগুলো এক নম্বর, দুই নম্বর, তিন নম্বর, মানসিক ওয়ার্ড ও ব্যাংক ভবন নামে পরিচিত। আর হাসপাতালে প্রবেশের জন্যও রয়েছে ৪টি পথ।

এক নম্বর ভবন

১১তলা বিশিষ্ট ১ নম্বর ভবনে ৩টি সিঁড়ির পাশাপাশি রয়েছে লিফট সুবিধা। নিচতলায় রয়েছে জরুরি বিভাগ, এমআরআই, সিটিস্ক্যান, ব্রেস্ট চিকিৎসায় এক্স-রে অব ম্যামোপ্রাফি মেশিন ও পরিবহন শাখা। পাশেই রয়েছে পথ্য বিভাগ। নিচতলায় ভবনের বাইরে উত্তর-পশ্চিম কোণে রয়েছে আগত রোগীর স্বজনদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা, যা নামমাত্র মূল্যে সংগ্রহ করা যায়।
ভবনটির দ্বিতীয়তলায় রয়েছে এক্সরের জন্য তিনটি রুম। এখানে অত্যাধুনিক ৫টি মেশিন রয়েছে, যা অভিজ্ঞ টেকনোলজিস্ট দ্বারা পরিচালিত হয়। এ ছাড়া রয়েছে দাঁতের পরীক্ষার জন্য ওপিজি এক্স-রে মেশিন ও হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগ। দ্বিতীয়তলায় রোগীদের উঠা-নামায় লিফটের পাশাপাশি রয়েছে ফ্ল্যাট সিঁড়ির ব্যবস্থা।
এ ভবনের দ্বিতীয়তলায় ফ্ল্যাট সিঁড়ির সামনে রয়েছে ক্যান্টিনের ব্যবস্থা, যেখানে সাশ্রয়ে চিকিৎসক-মেডিকেল শিক্ষার্থীসহ রোগীর স্বজনদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবার সরবরাহ করা হয়। ক্যান্টিন খোলা থাকে সকাল ৭টা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত।
তৃতীয়তলায় রয়েছে মহিলা ও শিশু সার্জারি বিভাগ। এ ছাড়াও আছে চারটি অপারেশন থিয়েটার, ১০ শয্যার আইসিইউ ও বার্ন ইউনিট।
সপ্তমতলায় গুরুতর অসুস্থ নবজাতকদের চিকিৎসায় রয়েছে গর্ব করার মতো ২৭ শয্যা বিশিষ্ট সমৃদ্ধ নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (এনআইসিইউ)। এতে রয়েছে অত্যাধুনিক এক্স-রে মেশিন। চিকিৎসাধীন শিশুদের তাপমাত্রা সঠিক রাখতে এখানে আছে অত্যাধুনিক ১৮টি ওয়ার্মার। লাইফ সাপোর্টের জন্য রয়েছে ছয়টি ভ্যান্টিলেটর। ১৫টি ফটোথেরাপি মেশিন, আল্ট্রাসনোগ্রাফি এবং ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিন।
এই ভবনের পেছনে রয়েছে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ছাত্রী হোস্টেল ও মহিলা ইন্টার্নি হোস্টেল। রয়েছে হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন মেশিন, যেখান থেকে পুরো হাসপাতালের অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। আছে শায়েস্তা খানের আমলের তিনশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী একটি প্রাচীন মসজিদ।
হাসপাতালের ব্যাংক ভবন সংলগ্ন দুই নম্বর প্রবেশ পথের পাশে রয়েছে একটি মসজিদ। এর সঙ্গে লাগোয়া পুরাতন ভবনে রয়েছে ট্রান্সফিউশন মেডিসিন, গ্যাস্ট্রোএন্টারলজি, ডায়াবেটিস ও লিভার বিভাগ। এখানেই রয়েছে হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক। এই ভবনের সামনে দৃষ্টিনন্দন ফুলবাগানের পূর্ব-উত্তর কোণে রয়েছে আরেকটি অক্সিজেন মেশিন, পুরো হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য নির্মিত কেন্দ্রটি চালুর অপেক্ষায় রয়েছে।

দুই নম্বর ভবন

দুই নম্বর ভবনের নিচতলায় পরিচালিত হয় সার্জারি, গাইনি ও পরিবার পরিকল্পনার বহির্বিভাগের কার্যক্রম।
এ ভবনের দ্বিতীয়তলায় থাকা ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি বিভাগে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টাই সেবা দেওয়া হয়। এই তলায় রয়েছে চক্ষু, নাক-কান-গলা, চর্ম ও যৌন এবং শিশু বহির্ভাগের কার্যক্রম। এ ছাড়াও রয়েছে শিশু বিকাশ কেন্দ্র ও ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার। চোখের ছোট-খাটো অপারেশনগুলোও পরিচালিত হয় ভবনটির এখানে।
তৃতীয়তলায় রয়েছে কার্ডিওলজি বিভাগ, দুটি ক্যাথল্যাব, যেখানে হার্টের রোগীদের এনজিওগ্রাম করা হয়। রোগীদের চাহিদার আলোকে সপ্তাহে ২/৩ দিন এ কার্যক্রম চলে। এখানে হাসপাতালের সিসিওতে ১৩টি ও পিসিসিওতে ২২টি শয্যা রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে ইসিজি, ইকো ও ইটিটি রুম। ৩টি ইকো ও দুটি ইটিটি মেশিন রয়েছে।
পঞ্চমতলায় রয়েছে নেফ্রলজি বিভাগ। এখানে রয়েছে স্বল্পমূল্যে রোগীদের ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা। বিভিন্ন ক্যাটাগরির ২৭টি ডায়ালাইসিস মেশিন রয়েছে এ হাসপাতালে। সলিমুল্লায় একই সময়ে বিশ জন রোগীকে ডায়ালাইসিস দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। ছয় মাসের প্যাকেজে প্রতি রোগীর কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ২২ হাজার টাকা। এ প্যাকেজের আওতায় একজন রোগী ৪৮ বার ডায়ালাইসিসের সুযোগ পান। খরচ বিবেচনায়, যা বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় একেবারেই কম।
হাসপাতালের এ ভবনের ষষ্ঠ ও সপ্তমতলায় রয়েছে মেডিসিন বিভাগ। অষ্টমতলায় ভর্তি আছেন নিউরোলজি, হেমাটলজি, হেপাটলজি, এন্ডোক্রাইন ও রেসপেরেটরি মেডিসিন বিভাগের রোগীরা।

তিন নম্বর ভবন

তিন নম্বর ভবনের নিচতলায় পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ড এবং দ্বিতীয়তলায় রয়েছে মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড। তিনতলায় রয়েছে পেয়িং বেড। ভবনটির পেছনে রয়েছে নার্সিং ইনস্টিটিউট।
হাসপাতালের তিন নম্বর গেট দিয়ে ঢুকলেই মিলবে পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্র। সেখানে সলিমুল্লায় চিকিৎসাধীন রোগীদের জন্য রয়েছে উন্নত মেশিনের মাধ্যমে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ। একটু সামনে রয়েছে মানসিক রোগীদের নির্ধারিত ওয়ার্ড। এখানে গুরুতর রোগীদেরকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা

মিটফোর্ড হাসপাতালে সরকার নির্ধারিত মূল্যেই প্রয়োজনীয় সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার জন্য দুই নম্বর ভবনের সামনে নির্ধারিত কাউন্টারে টাকা জমা দিতে হয়।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা হলো: রেনাল এনজিওগ্রাম, সিটি স্ক্যান, এমআরআই ইনডিভিজুয়াল, এমআরআই কনট্রাস্ট রেটস, এক্স-রে, মেমোগ্রাফি ৮০০, টিসি, ডিসি, ইএসআর, হিমোগ্লোবিন ১৫০, প্লেটিলেট, বোন ম্যারো, ব্লাড সুগার, সিরাম বিলিরুবিন, সিরাম ক্রিয়েটিনিন, লিভার ফাংশন টেস্ট, কিডনি বায়োপসি, অ্যান্টিবডি নির্ণয়, এইচআইভি, এন্টি থাইরয়েড পারঅক্সিডেস ও ডেঙ্গু।
হাসপাতালে কিছু দালালের উৎপাত থাকলেও কর্তৃপক্ষের সক্রিয় ভূমিকায় তারা সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পায় না। পরিচালকের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের কল্যাণে হাসপাতালের সেবা ও সামগ্রিক পরিবেশ অনেক সুন্দর অবস্থায় রয়েছে।

অপারেশন

কার্ডিয়াক সার্জারি ও ট্রান্সপ্ল্যান্ট ছাড়া এ হাসপাতালে ছোট-বড় সব ধরনের অপারেশন হয়। নামমাত্র মূল্যে রয়েছে সিজারের সুব্যবস্থা। ফি বেডে চিকিৎসাধীন রোগীদের অপারেশনের জন্য কোনো টাকা দিতে হয় না। পেয়িং বেডের রোগীদের মাইনর অপারেশনের জন্য ৫০০ টাকা, মেজর অপারেশনের জন্য ১০০০ টাকা এবং কেবিনে ভর্তি রোগীদের মাইনর ও মেজর অপারেশনের জন্য ২০০০ টাকা দিতে হয়।

সকল বিল অনলাইনে

হাসপাতালের সব পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ যাবতীয় বিল অনলাইনে প্রদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যার ফলে লেনদেনে বন্ধ হয়েছে আর্থিক অনিয়মের সকল দুয়ার।
অনলাইনে বিল পরিশোধ পদ্ধতি চালু হওয়ার ফলে সরকারের রাজস্ব আয় বেড়ে গেছে প্রায় চারগুণ। হাসপাতালের তথ্য মতে, পূর্বে বছরে যেখানে আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা আয় হতো, সেখানে বর্তমানে প্রায় ১০ থেকে ১১ কোটি টাকা আয় হয়। তাদের দাবি, রাজস্ব আদায়ে অভাবনীয় সাফল্যের এ পদ্ধতি অনুসরণের চেষ্টা চালাচ্ছে, ঢাকা মেডিকেল ও চট্টগ্রাম মেডিকেলসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর থেকে মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। দক্ষতার সঙ্গে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে হাসপাতালটি হয়ে উঠেছে রোগীদের আস্থার প্রতীক। তবে জনবলসহ অন্যান্য সংকট কাটিয়ে উঠতে পারলে চিকিৎসা সেবায় আসবে অভাবনীয় গতি।