ঢাকা ১২:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝালকাঠি শিশুসদনে খাবারের তালিকায় আছে মাছ-মাংস, খেতে হয় সবজী!

  • স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৭:২১:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই ২০২৩
  • ৭০ খবরটি দেখা হয়েছে

অবিশাস্য হলেও সত্য ঝালকাঠি সরকারি (ইয়াতিমখানা) শিশু সদনে শিশুদের ১ বেলা খাবারের জন্য বরাদ্দ মাত্র ২৩ টাকা! বর্তমান বাজার দরের তুলনায় যা নিতান্তই নগন্য। এক কথায় চাহিদার তুলানায় বরাদ্দ অপ্রতুল। অথচ এ টাকায় প্রতি সপ্তাহে মাছ, মাংস, ডিম বরাদ্দ আছে খাবার তালিকায়। কিন্তু সবজি খেয়েই এদের কাটাতে হচ্ছে বেশির ভাগদিন।

আমি লোকসান দিয়ে শিশুসদনে খাবার সরবরাহ করছি। কারণ আমি যে দরে এখানে খাবার সরবরাহের কাজ পেয়েছি বাজার দর তার চেয়ে বেশি। এতে আমার ২৫/৩০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে প্রতি মাসে।

আমি এবার টেন্ডার দিতে নাচাইলেও কর্তৃপক্ষের অনুরোধে দিয়েছি। জন প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকার পরিবর্তে এখন ৪ হাজার করা দরকার। এই টাকায় প্রতিদিন সকালে নাস্তা, বেলা ১০ টায় গড়ম ভাত সবজী ভাজি, দুপুরে ২দিন মুরগী, ২দিন ডিম ২ দিন মাছ। এরপর বিকেলে নাস্তা দুধ মুড়ি রাতে আবার ভাত।

একই বরাদ্দ থেকে জ্বালানী, ভ্যাট, আইটির টাকা কেটে আবার বিশেষ দিনের খাবারও দিতে হচ্ছে। যেমন ঈদ, কোরবানী, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বরসহ বিভিন্নদিন আছে এভাবে। সামান্য বরাদ্দে কিভাবে খাবার সরবরাহ করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ঠিকাদার আনোয়ার হোসেন এভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

শিশুসদন সূত্রে জানাযায়, জনপ্রতি ৩ বেলা খাবার ও ২ বার নাস্তা খরচ বাবদ মাসিক বরাদ্দ ৩ হাজার টাকা। উল্লেখিত বরাদ্দ থেকে ভ্যাট, আইটি এবং ঠিকাদারের লাভের অংশ বাদ দিয়ে মাসে ২ হাজার টাকা অবশিষ্ট থাকে। এ হিসাবে প্রতি বেলায় খাবার খরচ থাকে মাত্র ২৩ টাকা।

গত ১১ জুলাই শিশুপরিবারে গিয়ে ওদের সাথে কথা বলে জানাযায় প্রায়দিনই সস্তা শবজী দিয়ে খেতে হচ্ছে তাদের। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তাদের কথা না বলতে সতর্ক করা। তাই ভয়ে কেহ মুখ খুলতে বা খাবারসহ কোন সমস্যার কথা জানাতে রাজি নয়।

ঝালকাঠি সদরের বাসন্ডাইউনিয়নের নিবাসি এক শিশু শিক্ষার্থী জানায়, ১০ জুলাই রাতে এবং সকালে কুমড়া আর ভাত খেয়েছে তারা। আবার ১১ জুলাই বেলা ১২ টার দিকে গিয়ে দেখা যায় দুপুরের জন্য রান্না করা হয়েছে শুধু সবজী।

এ দিন বাবুর্চি দুপুরে ডিমের কথা জানালেও সেখানে ডিম ছিলনা। বর্তমানে এ নিবাসে মোট শিশু আছে ৭০/৭৫ জন। বাবুর্চি মো. মিঠু জানান, তাকে রান্নার কাজে সহায়তা করে শিশু পরিবারের সদস্যরাই।

সরকারি এ শিশু পরিবারের ১৯৯৯ সনে নির্মিত ৪ তলা ভবনটিও মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানাযায়। রড ছাড়া সম্পূর্ন ইট গাথুনির উপর দাঁড়িয়ে আছে দীর্ঘ দিনের এই ৪ তলা ভবন।

এ বিষয়ে ৪ তলার ২ নং রুমের শিশুদের সাথে কথা বলে জানাযায়, অহরহ বালু ও প্লাষ্টার খসে পড়ায় তারা আতংকে আছে। নষ্ট হচ্ছে তাদের জামা কাপুড় এবং বিছানা। কর্তৃপক্ষ বলছে ঝুঁকিপূর্ন এ ভবনটি নিয়ে আমরাও আছি দুশ্চিন্তায়।

সূত্র মতে, উপ তত্তাবধায়কসহ মোট ২১ টির মধ্যে ১৩ টি পদে লোকবল আছে। নিবাসীদের মাথা পিছু মাসিক বরাদ্দের তালিকায় মোট বরাদ্দের পরিমান ৩ হাজার ৫ শত টাকা লেখা থাকলেও ঠিকাদার বলছে ৩ হাজার টাকা।

শিশু পরিবারের উপ তত্তাবধায়ক জসিম উদ্দিন জানান, বরাদ্দ ৩ হাজার টাকায় যে মেনু আসে সে ভাবে তাদের খাবার সরবরাহ করা হয়। কিন্তু ৩ হাজার টাকা থেকে ভ্যাট আইটি ও ঠিকাদারের লাভ নেয়ার পর অবশিষ্ট টাকায় মাছ মাংস ডিম খাওয়ানো সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার যে ভাবে যা বরাদ্দ দেন আমরা সে ভাবে ম্যানেজ করে খাওয়ানোর চেষ্টা করছি। তবে সবজি প্রতিদিন দেয়ার কথা তিনি স্বিকার করেন।

ট্যাগ :

ঝালকাঠি শিশুসদনে খাবারের তালিকায় আছে মাছ-মাংস, খেতে হয় সবজী!

আপডেট সময় : ০৭:২১:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই ২০২৩

অবিশাস্য হলেও সত্য ঝালকাঠি সরকারি (ইয়াতিমখানা) শিশু সদনে শিশুদের ১ বেলা খাবারের জন্য বরাদ্দ মাত্র ২৩ টাকা! বর্তমান বাজার দরের তুলনায় যা নিতান্তই নগন্য। এক কথায় চাহিদার তুলানায় বরাদ্দ অপ্রতুল। অথচ এ টাকায় প্রতি সপ্তাহে মাছ, মাংস, ডিম বরাদ্দ আছে খাবার তালিকায়। কিন্তু সবজি খেয়েই এদের কাটাতে হচ্ছে বেশির ভাগদিন।

আমি লোকসান দিয়ে শিশুসদনে খাবার সরবরাহ করছি। কারণ আমি যে দরে এখানে খাবার সরবরাহের কাজ পেয়েছি বাজার দর তার চেয়ে বেশি। এতে আমার ২৫/৩০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে প্রতি মাসে।

আমি এবার টেন্ডার দিতে নাচাইলেও কর্তৃপক্ষের অনুরোধে দিয়েছি। জন প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকার পরিবর্তে এখন ৪ হাজার করা দরকার। এই টাকায় প্রতিদিন সকালে নাস্তা, বেলা ১০ টায় গড়ম ভাত সবজী ভাজি, দুপুরে ২দিন মুরগী, ২দিন ডিম ২ দিন মাছ। এরপর বিকেলে নাস্তা দুধ মুড়ি রাতে আবার ভাত।

একই বরাদ্দ থেকে জ্বালানী, ভ্যাট, আইটির টাকা কেটে আবার বিশেষ দিনের খাবারও দিতে হচ্ছে। যেমন ঈদ, কোরবানী, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বরসহ বিভিন্নদিন আছে এভাবে। সামান্য বরাদ্দে কিভাবে খাবার সরবরাহ করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ঠিকাদার আনোয়ার হোসেন এভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

শিশুসদন সূত্রে জানাযায়, জনপ্রতি ৩ বেলা খাবার ও ২ বার নাস্তা খরচ বাবদ মাসিক বরাদ্দ ৩ হাজার টাকা। উল্লেখিত বরাদ্দ থেকে ভ্যাট, আইটি এবং ঠিকাদারের লাভের অংশ বাদ দিয়ে মাসে ২ হাজার টাকা অবশিষ্ট থাকে। এ হিসাবে প্রতি বেলায় খাবার খরচ থাকে মাত্র ২৩ টাকা।

গত ১১ জুলাই শিশুপরিবারে গিয়ে ওদের সাথে কথা বলে জানাযায় প্রায়দিনই সস্তা শবজী দিয়ে খেতে হচ্ছে তাদের। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তাদের কথা না বলতে সতর্ক করা। তাই ভয়ে কেহ মুখ খুলতে বা খাবারসহ কোন সমস্যার কথা জানাতে রাজি নয়।

ঝালকাঠি সদরের বাসন্ডাইউনিয়নের নিবাসি এক শিশু শিক্ষার্থী জানায়, ১০ জুলাই রাতে এবং সকালে কুমড়া আর ভাত খেয়েছে তারা। আবার ১১ জুলাই বেলা ১২ টার দিকে গিয়ে দেখা যায় দুপুরের জন্য রান্না করা হয়েছে শুধু সবজী।

এ দিন বাবুর্চি দুপুরে ডিমের কথা জানালেও সেখানে ডিম ছিলনা। বর্তমানে এ নিবাসে মোট শিশু আছে ৭০/৭৫ জন। বাবুর্চি মো. মিঠু জানান, তাকে রান্নার কাজে সহায়তা করে শিশু পরিবারের সদস্যরাই।

সরকারি এ শিশু পরিবারের ১৯৯৯ সনে নির্মিত ৪ তলা ভবনটিও মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানাযায়। রড ছাড়া সম্পূর্ন ইট গাথুনির উপর দাঁড়িয়ে আছে দীর্ঘ দিনের এই ৪ তলা ভবন।

এ বিষয়ে ৪ তলার ২ নং রুমের শিশুদের সাথে কথা বলে জানাযায়, অহরহ বালু ও প্লাষ্টার খসে পড়ায় তারা আতংকে আছে। নষ্ট হচ্ছে তাদের জামা কাপুড় এবং বিছানা। কর্তৃপক্ষ বলছে ঝুঁকিপূর্ন এ ভবনটি নিয়ে আমরাও আছি দুশ্চিন্তায়।

সূত্র মতে, উপ তত্তাবধায়কসহ মোট ২১ টির মধ্যে ১৩ টি পদে লোকবল আছে। নিবাসীদের মাথা পিছু মাসিক বরাদ্দের তালিকায় মোট বরাদ্দের পরিমান ৩ হাজার ৫ শত টাকা লেখা থাকলেও ঠিকাদার বলছে ৩ হাজার টাকা।

শিশু পরিবারের উপ তত্তাবধায়ক জসিম উদ্দিন জানান, বরাদ্দ ৩ হাজার টাকায় যে মেনু আসে সে ভাবে তাদের খাবার সরবরাহ করা হয়। কিন্তু ৩ হাজার টাকা থেকে ভ্যাট আইটি ও ঠিকাদারের লাভ নেয়ার পর অবশিষ্ট টাকায় মাছ মাংস ডিম খাওয়ানো সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার যে ভাবে যা বরাদ্দ দেন আমরা সে ভাবে ম্যানেজ করে খাওয়ানোর চেষ্টা করছি। তবে সবজি প্রতিদিন দেয়ার কথা তিনি স্বিকার করেন।