ঝালকাঠি জেলা পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) শাখার চার সদস্যদের বিরুদ্ধে কলেজছাত্রকে ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। বান্ধবীকে নিয়ে ঘুরতে গেলে তাদের হেনস্তার পাশাপাশি ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন ঝালকাঠি ডিবি পুলিশের ওই চার সদস্য।
রোববার (১৭ জুন) পুলিশ হেড কোয়াটার্সে আইজিপি কমপ্লেইন সেলে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এছাড়া বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি, ঝালকাঠি পুলিশ সুপার এবং ঝালকাঠি ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে অভিযোগের অনুলিপিও দেন।
ভুক্তভোগী ছাত্রের নাম মো. শামিম খান রায়হান। তিনি ঝালকাঠি পৌর এলাকার ২ নম্বর ওয়ার্ড ব্র্যাকমোড় সংলগ্ন পূর্ব চাঁদকাঠি এলাকার বাসিন্দা। তিনি বরিশাল পলিটেকনিক কলেজের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগে পঞ্চম সেমিস্টারে অধ্যয়নরত।
অভিযুক্তদের মধ্যে তিনজনের নাম শনাক্ত করতে পেরেছেন ভুক্তভোগী ছাত্র শামিম। তারা হলেন- ঝালকাঠি জেলা পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) শাখায় কর্মরত মো. সালমান, মো. জনি এবং মো. হাসান।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ৭ জুন ঝালকাঠি মহিলা কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত তার বান্ধবীকে সঙ্গে গাবখান নদীর তীর ইকোপার্কে ঘুরতে যান রায়হান। দুটি মোটরসাইকেলে চার জন লোক এসে ডিবি পরিচয় দিয়ে তাদেরকে গলায় হাত দিয়ে ছবি তুলতে বলেন। এ প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় রায়হানকে চড় থাপ্পড় মেরে দুজনের মোবাইল ফোন কেড়ে নেন ওই চারজন।
এ সময় জোর করে তাদের ভিডিও ধারণ করা হয়। এরপর ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। এজন্য তিন দিন সময় বেঁধে দিয়ে কেড়ে নেওয়া ফোন দুটি ফেরত দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে ডিবির ওই চার সদস্য। টাকা না দিলে দুজনের একসঙ্গে তোলা ছবি পরিবারকে পাঠানোর ভয়ভীতি দেখানো হয়।
রায়হান বলেন, ‘৯ জুন সকালে আমার নম্বরে কল দিয়ে ডিবি পুলিশ সদস্য হাসান পরিচয় দিয়ে আমি কোথায় আছি জানতে চান। আমাকে ব্র্যাকমোড় মেইন রোডে থাকতে বলা হয়। এরপর আমি বিব্রত বোধ করে মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখি। পরদিন ১০ জুন বিকেল ৪টা ৪৮ মিনিটে কল করে আমার কাছে জানতে চাওয়া হয় আমি আমার বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলেছি কি না (টাকার বিষয়ে)। আমি উত্তরে বলেছি টাকা জোগাড় করতে পারিনি আমার বান্ধবী অসুস্থ।’
রায়হান আরও বলেন, ‘১৩ জুন বিকেলে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসার কথা বলে ব্র্যাকমোড় থাকতে বলে। কিন্তু তারা দুটি বাইকে চারজন রাত ৮ টার দিকে আসেন। আমাকে ডেকে নেন ব্রাকমোড় সংলগ্ন ব্রিজের ঢালে। জনি নামের একজন আমাকে বলেন, টাকার কথা ফোনে বলবা না।
সব সামনাসামনি বলবা। তখন আমাকে টাকার জন্য চাপ দেয়। না দিতে পারলে আমাদের ভিডিও পরিবারকে পাঠানোর ভয়ভীতি দেখান। টাকার জন্য আমাকে আরও দুদিন সময় দেন। শনিবার সন্ধ্যায় আরেক নম্বর থেকে আমাকে কল করলে আমি সাফ জানিয়ে দেই টাকা দিতে পারবো না। একথা শুনে অপর প্রান্ত থেকে ফোনের লাইন কেটে দেয়। এ নম্বরটি ট্রু কলারে জনি নাম দেখাচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে মো. হাসান এবং মো. জনি নামের অভিযুক্ত দুই ডিবি সদস্যের মোবাইল নম্বরে কল দিলে তারা দুজনই ঘটনা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে জানান। ঝালকাঠি জেলা গোয়েন্দা শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। যদি কেউ অভিযোগ করে থাকে তার সঙ্গে কথা বলবো। সত্যতা পেলে বিষয়টি দেখবো।