ঢাকা ১২:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাজায় হামলা বন্ধ করুন ; পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন

  • স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৬:২২:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৩
  • ১৩৩ খবরটি দেখা হয়েছে

গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত এবং অব্যাহত ইসরায়েলি আগ্রাসন মোকাবেলায় ওআইসির নির্বাহী কমিটির মন্ত্রী পর্যায়ের এক জরুরি বৈঠকে বাংলাদেশ তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। জেদ্দায় আজ ওআইসির সদর দপ্তরে মন্ত্রী পর্যায়ের এ বৈঠকে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন।

এ সময় তিনি বলেন, আমরা অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানাই যার ফলে ৩ হাজার জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে, যাদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ শিশু। সৌদি আরবের উদ্যোগে ওআইসি এর সদস্য রাষ্ট্রসমূহের পররাষ্ট্রমন্ত্রীগণ এ জরুরি বৈঠকে যোগ দেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন বলেন, গাজার হাসপাতালে ইসরায়েলের বর্বরোচিত বোমা হামলা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, বেসামরিক লোকদের লক্ষ্য করে গাজায় ইসরায়েলের দ্বারা পরিচালিত এ অসামঞ্জস্যপূর্ণ যুদ্ধ মানবাধিকার এবং মানবিক আইনের সমস্ত মৌলিক নীতির লঙ্ঘন করেছে। তাই আমরা সকল পক্ষের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গাজায় জরুরী যুদ্ধবিরতির আহবান জানাই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন আরো বলেন, গাজায় ইসরায়েলের মানবিক প্রবেশাধিকার প্রত্যাখ্যান এবং বেসামরিক অবকাঠামোতে নির্বিচারে হামলার কারণে গাজার মানবিক পরিস্থিতি সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে ফিলিস্তিনিদেরকে তাদের নিজস্ব মাতৃভূমি থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার জন্য ইসরায়েলের আহবানকে প্রত্যাখ্যান করি- যা সমগ্র অঞ্চলে মানবিক পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাবে।

তিনি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে গাজায় জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সহযোগী কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী এবং সাংবাদিকদের হত্যার নিন্দা এবং যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক মানবিক ও মানবাধিকার আইনের প্রতি অসম্মানের জন্য ইসরায়েলকে জবাবদিহি করার আহবান জানান। গত ১৬ অক্টোবর নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে রাশিয়ার প্রস্তাবিত রেজুলেশন পাশ না হওয়ায় তিনি হতাশা প্রকাশ ব্যক্ত করেন। ফিলিস্তিন সংকট নিরসন ও ফিলিস্তিনি জনগনের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরনে নিরাপত্তা পরিষদের ক্রমাগত ব্যর্থতার কারনে, তিনি অবিলম্বে একটি আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যেম ফিলিস্তিনের সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধানের জোরালো আবেদন জানান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সংঘাতের মূল কারণগুলিকে সমাধান করার আহবান জানাই৷ আমরা বিশ্বাস করি যে এই পুনরাবৃত্তি সমস্যার স্থায়ী সমাধান কেবলমাত্র ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং জাতিসংঘের রেজুলেশন, আরব শান্তি উদ্যোগ এবং কোয়ার্টেট রোড ম্যাপ দ্বারা ফিলিস্তিনের একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অধিকার অর্জনের মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব। আমরা বিশ্বাস করি যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই সমাধান উপলব্ধির দিকে একত্রিত হওয়া উচিত।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মুসলিম উম্মাহর সদস্য হিসেবে আমাদের ভাগ্য যেমন এক, তেমনি আমাদের সমস্যা সমাধানে দায়িত্বও অভিন্ন। ঐক্যবদ্ধভাবে আমরাই আমাদের যৌথ শান্তি ও স্থিতিশীলতার বিনির্মানে কাজ করতে পারি। ফিলিস্তিন জনগনের এই সংকটময় সময়ে সকল ওআইসি সদস্যা রাষ্ট্রসমূহকে ভেদাভেদ ভুলে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহবান জানিয়ে তিনি তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ওআইসি এর এই জরুরি বৈঠকে বিভিন্ন মুসলিম রাষ্টের পররাষ্ট্রমন্ত্রীগন যোগদান করে ফিলিস্তিনের জনগনের সাথে তাঁদের সংহতি প্রকাশ করেন ও ইসরালের অব্যহত আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানান। বৈঠকের শুরুতেই সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান সবাইকে স্বাগত জানিয়ে ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধান ও ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সহায়তার আহবান জানান। ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চলমান সংঘাতের সর্বশেষ পরিস্থিতি সবাইকে জানান। সভা শেষে একটি যৌথ ঘোঘণাপত্র সর্বসম্মতিক্রম্র গৃহীত হয়।

বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন ছাড়াও সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মাদ জাবেদ পাটোয়ারি ও জেদ্দাস্থ বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মোহাম্মাদ নাজমুল হক উপস্থিত ছিলেন।

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

গাজায় হামলা বন্ধ করুন ; পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন

আপডেট সময় : ০৬:২২:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৩

গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত এবং অব্যাহত ইসরায়েলি আগ্রাসন মোকাবেলায় ওআইসির নির্বাহী কমিটির মন্ত্রী পর্যায়ের এক জরুরি বৈঠকে বাংলাদেশ তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। জেদ্দায় আজ ওআইসির সদর দপ্তরে মন্ত্রী পর্যায়ের এ বৈঠকে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন।

এ সময় তিনি বলেন, আমরা অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানাই যার ফলে ৩ হাজার জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে, যাদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ শিশু। সৌদি আরবের উদ্যোগে ওআইসি এর সদস্য রাষ্ট্রসমূহের পররাষ্ট্রমন্ত্রীগণ এ জরুরি বৈঠকে যোগ দেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন বলেন, গাজার হাসপাতালে ইসরায়েলের বর্বরোচিত বোমা হামলা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, বেসামরিক লোকদের লক্ষ্য করে গাজায় ইসরায়েলের দ্বারা পরিচালিত এ অসামঞ্জস্যপূর্ণ যুদ্ধ মানবাধিকার এবং মানবিক আইনের সমস্ত মৌলিক নীতির লঙ্ঘন করেছে। তাই আমরা সকল পক্ষের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গাজায় জরুরী যুদ্ধবিরতির আহবান জানাই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন আরো বলেন, গাজায় ইসরায়েলের মানবিক প্রবেশাধিকার প্রত্যাখ্যান এবং বেসামরিক অবকাঠামোতে নির্বিচারে হামলার কারণে গাজার মানবিক পরিস্থিতি সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে ফিলিস্তিনিদেরকে তাদের নিজস্ব মাতৃভূমি থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার জন্য ইসরায়েলের আহবানকে প্রত্যাখ্যান করি- যা সমগ্র অঞ্চলে মানবিক পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাবে।

তিনি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে গাজায় জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সহযোগী কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী এবং সাংবাদিকদের হত্যার নিন্দা এবং যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক মানবিক ও মানবাধিকার আইনের প্রতি অসম্মানের জন্য ইসরায়েলকে জবাবদিহি করার আহবান জানান। গত ১৬ অক্টোবর নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে রাশিয়ার প্রস্তাবিত রেজুলেশন পাশ না হওয়ায় তিনি হতাশা প্রকাশ ব্যক্ত করেন। ফিলিস্তিন সংকট নিরসন ও ফিলিস্তিনি জনগনের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরনে নিরাপত্তা পরিষদের ক্রমাগত ব্যর্থতার কারনে, তিনি অবিলম্বে একটি আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যেম ফিলিস্তিনের সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধানের জোরালো আবেদন জানান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সংঘাতের মূল কারণগুলিকে সমাধান করার আহবান জানাই৷ আমরা বিশ্বাস করি যে এই পুনরাবৃত্তি সমস্যার স্থায়ী সমাধান কেবলমাত্র ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং জাতিসংঘের রেজুলেশন, আরব শান্তি উদ্যোগ এবং কোয়ার্টেট রোড ম্যাপ দ্বারা ফিলিস্তিনের একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অধিকার অর্জনের মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব। আমরা বিশ্বাস করি যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই সমাধান উপলব্ধির দিকে একত্রিত হওয়া উচিত।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মুসলিম উম্মাহর সদস্য হিসেবে আমাদের ভাগ্য যেমন এক, তেমনি আমাদের সমস্যা সমাধানে দায়িত্বও অভিন্ন। ঐক্যবদ্ধভাবে আমরাই আমাদের যৌথ শান্তি ও স্থিতিশীলতার বিনির্মানে কাজ করতে পারি। ফিলিস্তিন জনগনের এই সংকটময় সময়ে সকল ওআইসি সদস্যা রাষ্ট্রসমূহকে ভেদাভেদ ভুলে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহবান জানিয়ে তিনি তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ওআইসি এর এই জরুরি বৈঠকে বিভিন্ন মুসলিম রাষ্টের পররাষ্ট্রমন্ত্রীগন যোগদান করে ফিলিস্তিনের জনগনের সাথে তাঁদের সংহতি প্রকাশ করেন ও ইসরালের অব্যহত আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানান। বৈঠকের শুরুতেই সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান সবাইকে স্বাগত জানিয়ে ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধান ও ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সহায়তার আহবান জানান। ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চলমান সংঘাতের সর্বশেষ পরিস্থিতি সবাইকে জানান। সভা শেষে একটি যৌথ ঘোঘণাপত্র সর্বসম্মতিক্রম্র গৃহীত হয়।

বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন ছাড়াও সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মাদ জাবেদ পাটোয়ারি ও জেদ্দাস্থ বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মোহাম্মাদ নাজমুল হক উপস্থিত ছিলেন।