পবিত্র ঈদ-উল আজহার ছুটি শেষ হয়েছে।গতকাল রবিবার থেকে খুলেছে অফিস-আদালত। তবুও পরিবার-পরিজনের সাথে ঈদ আনন্দ শেষে জীবিকার তাগিদে এখনো ঢাকায় ফিরছে মানুষ।
ঈদ-উল আজহা শেষে ভোর থেকে বরিশালের নথুল্লাবাদ, রূপাতলী বাসটার্মিনালসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাসষ্টেশনগুলোতে দেখা গেছে ঢাকাগামী যাত্রীদের উপচেপড়া ভীর। পরিবহনের জন্য অপেক্ষমান যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বেশিরভাগই ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগদানের জন্য ঢাকার উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন।
নগরীর নথুল্লাবাদ বাসষ্ট্যান্ডে অপেক্ষমান যাত্রী খোকন হাওলাদার বলেন, পদ্মা সেতুর সুফলের কারণে এখন সবোর্চ্চ তিন ঘন্টার মধ্যে ঢাকায় পৌঁছানো সম্ভব হবে। তাই সকাল পৌনে ছয়টার দিকে বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ঢাকায় গিয়ে তিনি সকালের নাস্তা খেয়ে অফিসে যাওয়া সম্ভব হবে।
হাসান সরদার নামের অপর যাত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর সুফলের কারণে আগের মতো ফেরি ঘাটে ঘন্টার পর ঘন্টা যাত্রীদের অপেক্ষায় থাকতে হয়না। যেকারণে বরিশাল থেকে ভোরে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে অফিস করা সম্ভব হচ্ছে। তবে ঈদ উপলক্ষে বাসে কিছুটা বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর সুফল বইছে দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক পথে। এক সেতুর কারণে গত এক বছরে ১০ গুণ পরিবহন কোম্পানি যুক্ত হয়েছে শুধু দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল বিভাগের পাঁচ জেলায়।
ফলে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক ধরে বিভাগের পাঁচ জেলার মানুষ কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই প্রিয়জনের সাথে এবারের ঈদ আনন্দ করতে স্বল্প সময়ে বাড়ি ফিরেছেন। তেমনি করে ঈদের ছুটি শেষে পূণরায় আবার তারা কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে ছুঁটছেন।
শনিবার (১ জুলাই) সকাল থেকে বরিশাল নগরীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে ঢাকাগামী মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ওইদিন সকাল থেকে কোনো কোম্পানির বাস খালি যায়নি। যদিও বলা হচ্ছে, রবিবার ভোরে ঢাকাগামী বাসগুলোতে যাত্রীর চাঁপ বেশি হয়েছে। আর এক পদ্মা সেতুর কারণে বর্তমানে সড়কপথে যাত্রী চাঁপ সামাল দেওয়ার মতো সক্ষমতা তৈরি হয়েছে বলেও জানিয়েছেন পরিবহন মালিকরা।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু চালুর আগে ঢাকা-বরিশাল সড়ক পথে দেড়শ’র মতো যাত্রীবাহী বাস চলাচল করতো। আর এখন প্রায় সহস্রাধিক বাস চলাচল করছে। এরমধ্যে ২০ থেকে ২৫ কোম্পানির বিলাসবহুল বাসও রয়েছে। যদিও বড় বড় কোম্পানিগুলো বাদে কিছু পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
তবে স্বল্প সময়ে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরে খুশি এসব যাত্রীরা। এদিকে সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ভাটা পরেছে নৌ-পথে। আগের মতো যাত্রী না হওয়ায় ঈদ স্পেশাল সার্ভিস বন্ধ রাখার পাশাপাশি বহরে কমানো হয়েছে লঞ্চের সংখ্যাও।
বিলাসবহুল পরিবহনের কাউন্টারের স্টাফরা জানিয়েছেন, ৩ জুলাই পর্যন্ত তাদের কোনো বাসের সিট খালি নেই। সবগুলো অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে।
নগরীর লুৎফর রহমান সড়কের বাসিন্দা মিরাজ হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু চালুর আগে লঞ্চেই আসা-যাওয়া করতাম। কেবিন থাকলেও নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘন্টা আগে গিয়ে লঞ্চে উঠতে হতো। তারপর যাত্রীদের ঠাসাঠাসিসহ বিভিন্ন বিড়ম্বনায় পড়তে হতো। আর এখন পদ্মা সেতুর কারণে কোনো ধরনের দুর্ভোগ ছাড়াই নৌরুটের সাত থেকে আট ঘন্টার পথ মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টায় পাড়ি দেয়া যাচ্ছে।
তবে সরু সড়কের কারণে বরিশাল থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত যানবাহনের ধীরগতি থাকে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত যতো অল্প সময়ে এসেছি, তার থেকে তুলনামূলক অনেক বেশি সময় লেগেছে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পৌঁছাতে।
তিনি আরও বলেন, বরিশাল থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত সরু মহাসড়কে বৈধ-অবৈধ এমন কোনো যানবাহন নেই যা চলাচল করেনা। এ কারণে মহাসড়কটিতে যানবাহনের যেমন চাঁপ বেশি, তেমনি রয়েছে ধীরগতি।
পাশাপাশি মহাসড়কের ভূরঘাটা ও গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ডসহ নথুল্লাবাদ থেকে রূপাতলী পর্যন্ত প্রায় সময় যানজট লেগে থাকে দাবী করে বাস শ্রমিকরা বলেন, এসব স্টান্ডে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না।
যেকারণে যত্রতত্রভাবে ছোট-বড় যানবাহন ওভারটেকিং করতে গিয়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রান পেতে সর্বমহলে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পর্যন্ত সরু মহাসড়কটি এখন ফোরলেনে উন্নীত করণের জোর দাবি উঠেছে।
যদিও মহাসড়কে চাঁপ কমাতে সড়ক প্রশস্তকরণের উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক বিভাগ, ইতোমধ্যে ভাঙ্গা থেকে মাদারীপুর পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণের কাজও শেষ হয়েছে। বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন উল আহসান বলেন, ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে সাগরকন্যা কুয়াকাটা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেস ওয়ের মতো আরেক এক্সপ্রেস ওয়ে হবে। যা পরিবহন সেক্টরের বর্তমান সকল সমস্যা নিরসন করবে।